২.১.১ লেয়ারের পুষ্টি উপাদান সমূহের নাম

এসএসসি(ভোকেশনাল) - পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-১ - দ্বিতীয় পত্র (দশম শ্রেণি) | NCTB BOOK

২.১.১ লেয়ারের পুষ্টি উপাদান সমূহের নাম(Name of laver nutrient ingredients): 

খাদ্য উপকরণে পুষ্টি উপাদানের আধিক্যের ভিত্তিতে খাদ্য উপাদান মোট ৬ ভাগে ভাগ করা যায় । যেমন: 

(১) শর্করা জাতীয় উপাদান 

(২) আমিষ জাতীয় উপাদান 

(৩) চর্বি বা তৈল জাতীয় উপাদান 

(৪) খনিজ পদার্থ জাতীয় উপাদান 

(৫) ভিটামিন জাতীয় উপাদান 

(৬) পানি

হাঁস-মুরগির খাদ্যের ৭৫-৮০% ই শর্করা জাতীয় খাদ্য। সাধারণত যে দ্রব্যে ২০% এর কম আমিষ থাকে তাদের শর্করা জাতীয় খাদ্য হিসেব গণ্য করা হয়। প্রায় সব ধরনের দানা শস্যই শর্করা প্রধান খাদ্য।

শর্করা জাতীয় উপাদান আবার দুইভাগে বিভক্ত, যেমন- 

(ক) দানা জাতীয় ও 

(খ) আঁশ জাতীয়

চাল: চাল এবং চালের উপজাত দ্রব্যাদি মুরগির জন্য সহজপাচ্য ও সহজলভ্য শর্করা জাতীয় খাবার। খুদ বা ভাঙা চালের মূল্য তুলনামুলকভাবে কম। তাই বাচ্চা মুরগি ও ডিমপাড়া মুরগির জন্য খুদ ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। খুদের মধ্যে আমিষ এবং ভিটামিন বি২ থাকে। খুদে ১০-১২% আমিষ, ১৩% চর্বি এবং গড়ে ১১-১২% আঁশ থাকে।

 

ভূট্টা: ভূট্টা সুস্বাদু ও সহজপাচ্য হওয়ায় মুরগি বেশ পছন্দ করে । মুরগির খাদ্য হিসেবে ভূট্টা খুবই জনপ্রিয় । হলুদ ভুট্টার মধ্যে ভিটামিন-এ এর পরিমাণ অধিক থাকে। ভূট্টা ছোট ছোট করে ভেঁঙে বা গুঁড়ো করে ও হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।

 গমঃ গমকে অনেকে হাঁস-মুরগির আদর্শ খাদ্য বলে মনে করেন। গম সুস্বাদু এবং সহজপাচ্য। তদুপরি অন্যান্য দানাদার খাদ্যের তুলনায় আমিষের পরিমাণ অধিক। গমে সন্তোষজনক পরিমাণ ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে । গম ভাঙা ও গমের ভুষি হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। 

যবঃ অন্যান্য দানা শস্যের সাথে মিশিয়ে যবকে মুরগির খাদ্য হিসেবে দেয়া যায়। যবে আঁশের পরিমাণ অধিক। অতিরিক্ত যব খাওয়ালে মুরগির চর্বি পরিমাণ বেড়ে যায় । 

শাকসবজিঃ বেগুন, মিষ্টি আলু, লাউ, কুমড়া এবং অন্যান্য সবজির খোসা ও অন্যান্য পরিত্যক্ত অংশ সিদ্ধ করে মুরগিকে খেতে দেয়া যায়। এসব খাদ্য ভিটামিন সমৃদ্ধ। বাঁধাকপি, ফুলকপি, গাজর, বীট, পালং শাক, পুঁইশাক, নটেশাক, মূলা প্রভৃতির পাতা কুঁচি কুঁচি করে কেটেও মুরগিকে খেতে দেয়া যায়। এসব খাদ্য ক্যারোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ৷ 

চালের মিহি কুঁড়া: চালের কুঁড়া মুরগির একটি উৎকৃষ্ট খাবার। এতে চালের গুঁড়া থাকার ফলে শর্করার পরিমাণ অধিক। কুঁড়া সহজপাচ্য। কুঁড়া খাওয়ানোর আগে দেখে নিতে হবে তা ভেজা বা ছত্রাক আক্রান্ত কিনা । 

গমের ভুষি: গমের দানার মোটা অংশই ব্যবহৃত হয় ভুষি হিসেবে। গমের ভুষির মধ্যে গড়ে ১৬% আমিষ থাকে। গম ও ভূট্টা তুলনায় গমের ভুষির আমিষ উন্নতমানের। এতে নিয়াসিন ও থায়ামিনের পরিমাণ অধিক। ডিমপাড়া মুরগির ক্ষেত্রে ১৫% গমের ভুষি খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায় ।

আমিষ জাতীয় উপাদান দুইভাগে বিভক্ত, যেমন - 

(ক) প্রাণিজ আমিষ 

(খ) উদ্ভিজ্জ আমিষ

ফিস মিল বা শুটকি মাছের গুঁড়া: মাছ এবং তার বর্জ্য পদার্থকে শুকিয়ে চূর্ণ করে অথবা অন্য কোনো উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করে প্রাপ্ত দ্রব্যই ফিস মিল। এতে আমিষের পরিমাণ ৪৫-৫৫%। মুরগির জন্য ফিস মিল একটি আদর্শ খাদ্য। বাচ্চা মুরগিতে মাছের আঁশটে গন্ধ দূর করার জন্য অল্প পরিমাণে ফিস মিল ব্যবহার করতে হবে।

মিট মিল: মিট মিল হল শুকানো চূর্ণীকৃত মাংস বা মাংসের অংশ। এতে আমিষের পরিমাণ ৫০-৫৫% । মিট মিলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিদ্যমান। এছাড়া বিভিন্ন প্রকার ভিটামিনও থাকে।

কেঁচো মিল: কেঁচো থেকে তৈরি খাদ্যকেই বলা হয় কেঁচো মিল। ফিস মিল, মিট মিল, বোন মিল প্রভৃতির বিকল্প হিসেবে কেঁচো মিল ব্যবহার করা যায়। এতে অশোধিত আমিষের পরিমাণ ৫৯.৪৭% ।

হাড়ের গুঁড়া ও মাংসের অবশিষ্টাংশঃ খুর, শিং ও হাড় ব্যতিত প্রাণীর দেহের মাংসের অবশিষ্টাংশ শুকিয়ে ও গুঁড়ো করে এ খাদ্য পাওয়া যায়। এতে আমিষের পরিমাণ ৫৫%, খনিজ পদার্থের পরিমাণ ৪%। হাড়ের গুঁড়া ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। উত্তমরুপে পরিশোধন করার পর এগুলো মুরগির খাদ্যের সাথে মেশানো হয়। 

রক্তের গুঁড়া বা ব্লাড মিল: কসাইখানা থেকে পশুর রক্ত সংগ্রহ করে তা শুকিয়ে চূর্ণ করা হয়। তবে এদেশে পর্যাপ্ত পশু রক্ত পাওয়া যায় না। এর মধ্যে আমিষের পরিমাণ প্রায় ৭৫-৮০%। এতে সামান্য পরিমাণে খনিজ পদার্থও থাকে। বাচ্চা মুরগির খাদ্যের ব্লাড মিল দেয়া অনুচিত।

পোল্ট্রির শুকনা বিষ্ঠা: এতে অশোধিত আমিষ থাকার ফলে এটি চালের কুড়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির ক্ষেত্রে রেশনে যথাক্রমে ৫-১০% এবং ২০% হারে এটি ব্যবহার করা যায়। 

সয়াবিন মিল: সয়াবিন ভালো করে সিদ্ধ করে শুকানোর পর গুড়ো করে বা তেল বের করে নেয়ার পর মিল হিসেবে মুরগিকে খাওয়ানো যায়। এতে প্রায় ৪৫% আমিষ ব্যতীতও সামান্য পরিমাণে চর্বি ও পানিতে দ্রবণীয় ভিটামিন থাকে ।

তিলের খৈল: এতে আমিষের পরিমাণ ৪০-৪৫% ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২.৩% । তিলের খৈল মুরগির জন্য একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। চীনা বাদামের খৈল ও তিলের খৈল অর্ধেক পরিমাণে মিশিয়ে মুরগির খাদ্য তৈরি করা যায়। 

সরিষার খৈল: সরিষা থেকে তেল নিষ্কাশনের পর যে অংশ পাওয়া যায় তাকে বলা হয় সরিষার খৈল । এতে ৩৭-৪০% আমিষ, ০.৬% ক্যালসিয়াম এবং ১.০% ফসফরাস থাকে। বিশেষ স্বাদ ও সুগন্ধের কারণে মুরগি এ খৈল পছন্দ করে ।

চীনা বাদামের খৈল: চীনা বাদামের খৈল সুস্বাদু। অন্যান্য খাদ্যের সাথে চীনা বাদামের খৈল মিশিয়ে সুষম খাদ্য তৈরি করা যায়। এতে আমিষ ৪৬.৫%, চর্বি বা স্নেহ পদার্থ ৪%, ক্যালসিয়াম ০.২৮% এবং ফসফরাস ১.২৮% থাকে।

নারকেলের খৈল: এ খৈলে আমিষের পরিমাণ ২০-২৫%। তবে বেশি দিনের পুরাতন খৈল মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ কিছুদিন রেখে দিলেই খৈলে ছত্রাক জন্মায় এবং খাবারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।

চর্বি জাতীয় উপাদান:

খনিজ পদার্থ :

শামুক ও ঝিনুক খোসা: শামুক ও ঝিনুকের খোসা গুঁড়ো করে অন্যান্য খাদ্যের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়।। তবে এ খাদ্য সর্বোচ্চ ১-৩% মুরগির খাদ্যের সাথে মেশানো উচিত। ঝিনুকের গুঁড়ায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৭-৩৮%।

চুনা পাথর: ক্যালসিয়ামের উৎকৃষ্ট উৎস হলো চুনা পাথর। মুরগির খাদ্যে ২-৪% হারে ব্যবহার করা যায় । এতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ৩৮% । এটি মুরগির হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । 

বোনমিল: এটি একটি শুষ্ক খাদ্য। হাড়কে বায়ু চাপের উপস্থিতিতে বাষ্প ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়। মুরগির খাদ্যের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায় ৷

সাধারণ খাদ্য লবণ: মুরগির খাদ্যে অল্প পরিমাণে লবণ যোগ করা হলে মুরগির দৈহিক বৃদ্ধি ও খাদ্য ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়। এটি সোডিয়াম ও ক্লোরাইডের প্রধান উৎস। তবে মুরগির খাদ্যে অধিক মাত্রায় লবণ যোগ করা ঠিক নয়। খাবারের সাথে ০.৫% মাত্রায় লবণ যোগ করতে হয়। লবণ মুরগির পানি গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । তাছাড়া লবণ মুরগির খাদ্যকে সুস্বাদু করে ও হজমে সাহায্য করে ।

ভিটামিন জাতীয় উপাদান: শাকসবজি, মাছের তেল, অংকুরিত গম ও ছোলা, হলুদ ভুট্টা, সবুজ ঘাস, চালের মিহি কুড়া ইত্যাদিতে কম বেশি বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন থাকে । তারপরও খাদ্যের সাথে কৃত্রিম ভিটামিন প্রিমিক্স হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।

 

 

 

Content added By
Promotion